১২ জুলাই, ২০২১
হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা ফাঁস
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়িজকে হত্যা করতে অন্তত তিন মাস আগে হাইতিতে প্রবেশ করেছিল ঘাতকরা। এতটা সময় ধরে তারা হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন এবং সুবিধাজনক সময়কে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হত্যার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা ফাঁস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩ মিনিটে পড়ুন
স্থানীয় সময় গত বুধবার (৭ জুলাই) ভোর রাতে পরিকল্পনাকারী দলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালায় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পর দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার অভিযানে নামে। ওই ঘটনায় ২৮ জনকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২৬ জন কলম্বিয়ান, বাকি দুজন হাইতিয়ান আমেরিকান নাগরিক।
হাইতির পুলিশপ্রধান লিওন চার্লস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন কলম্বিয়ান নিহত হন। এ সময় গ্রেপ্তার হন ১৫ কলম্বিয়ান। পালিয়ে গেছেন আরও ৮ কলম্বিয়ান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া এ সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই আমেরিকান নাগরিকও।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘাতক দলের সদস্য আমেরিকান নাগরিক জেমস সোলাগেস হাইতির জাকমেল শহরের বাসিন্দা হলেও নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। তিনি মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড রিপায়ার ব্যবসায়ী। তিনি একসময় হাইতিতে কানাডিয়ান দূতাবাসের দেহরক্ষীদের প্রধান কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তবে কানাডার দূতাবাস জানিয়েছে, একটি বেসরকারি চুক্তির মাধ্যমে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন যেখানে কানাডার দূতাবাস সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। জাকমেল শহরে একটি এনজিওর সভাপতিও এই সোলাগেস।
অপর আমেরিকান নাগরিক ভিনসেন্ট জোসেফও সোলাগেসের মতো ফ্লোরিডায় থাকেন। তবে তার সম্পর্কে বেশির ভাগ তথ্যই অজানা।
এদিকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দিয়েগো মোলানোও জানান, অন্তত ছয়জন কলম্বিয়ান নাগরিক এবং সাবেক সেনা সদস্য হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যায় অংশ নেন। যাদের মধ্যে ম্যানুয়েল আন্তোনিও গ্রোসো গুয়ারিন নামে একজনসহ আরও তিনজন গত ৪ জুন বিকেলে ডোমিনিকান রিপাবলিকে যান এবং সেখান থেকে স্থলপথ দিয়ে হাইতিতে প্রবেশ করেন।
গত ৬ জুনে ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায়, গ্রোসো গুয়ারিন হাইতির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে ফটকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আছেন।
হত্যার কারণ সম্পর্কে যা জানা যায়
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতিতে লাগাতার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক সংকট ইত্যাদি কারণে সম্প্রতি এমনিতেই সহিংসপ্রবণ হয়ে ওঠে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টেকে হত্যা করা হলো।
বিবিসি জানায়, কী উদ্দেশ্যে জোভেনেল মোয়িজকে হত্যা করা হয়েছে; সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঘাতকরা কোনো বাধা ছাড়া কীভাবে একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হাউসে ঢুকতে পারল, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া হাইতির বিরোধীদলীয় নেতারা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
বিরোধী দলের দাবি, জোভেনেল মোয়িজের পূর্বসূরি মার্টেলি ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন। সে হিসেবে মোয়িজের পাঁচ বছরের মেয়াদকাল ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মোয়িজের দাবি ছিল, তিনি যেহেতু ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা নিয়েছেন, সে হিসেবে তিনি আরও এক বছর বৈধ প্রেসিডেন্ট থাকবেন।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি, সংবিধান সংশোধনে গণভোটের উদ্যোগ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ নির্বাহী ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার মতো অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি ২০১৮ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে হাইতির পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন না দিয়ে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখেন মোয়িজ। এতে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিরোধীরা পদত্যাগের দাবি জানালে, মোয়িজ তার সরকারকে উৎখাত এবং তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের কথা জানান। তবে বিরোধীরা তার ওই দাবিকে নাকচ করে দেয়।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট মোয়িজ দেশে কিছু অভিজাত গোষ্ঠীর প্রভাবের বিরোধিতা করেছিলেন। যা তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট হত্যার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হাইতির কর্মকর্তারা জানান, প্রেসিডেন্ট হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনিদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে ধরতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
প্রসঙ্গত, হাইতিতে ১৯১৫ সালেও প্রেসিডেন্ট হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
0 মন্তব্যসমূহ