Header Ads Widget

Responsive Advertisement

‘ডিরেক্টর হওয়া এত সহজ না’

 বিভিন্ন চ্যানেল ও ইউটিউবে ঈদে এবার তিন শতাধিক নাটক প্রচার হয়েছে। এর মধ্যে  দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে হাতে গোনা কিছু নাটক। কিন্তু সিংহ ভাগ নাটকই সেভাবে দর্শক আকর্ষণ করতে পারছে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন পারছে না, এই দায়টা কে নেবে?

অভিনেত্রী দীপা খন্দকার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ঈদের নাটক দেখছি এক সপ্তাহ ধরে। ১২–১৫টা দেখা হয়েছে। তার মধ্যে ৩–৪টা ভালো লেগেছে। ভাইরে ডিরেকটর হওয়া এত সহজ না।’ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যাদের নাটক নিয়ে সবচেয়ে বেশি রিভিউ দেখছি, সেগুলো দেখলাম। অনেকগুলো অসাধারণ গল্প। নির্মাণ, অভিনয়, উপস্থাপনা ভালো লেগেছে। কিন্তু কিছু কাজ দেখে খুবই হতাশ। গল্পের শুরুটা খুবই ভালো লেগেছে। তার পরে গল্প এগোয় ধীরে। শেষ একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই জন্যই লিখেছি, নির্মাতা হওয়া এত সহজ না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’

দীপা বলেন, ‘একটা নাটকে জার্নি থাকতে হবে। যেটা দর্শককে বসিয়ে রাখবে। থ্রিলার গল্প হলে সেই থ্রিলটা ধরে রাখতে হবে। সামাজিক গল্প হলেও সেই টান টান আকর্ষণ থাকতে হবে। এটা নির্মাতাকে কন্ট্রোল করতে হবে। এখানে অভিনয়শিল্পীর কিছু করার নেই। আমাদের মোশাররফ করিমসহ অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী আছেন। তাদের সেভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না নির্মাতারা। দুই একটি দৃশ্যে স্যাড বা ইমোশনাল সিন দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। পুরো গল্পটাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করতে হবে নির্মাতাদের।’

একই বিষয়ে নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন অন্য এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘খুব সহজে কেউ অভিনয়শিল্পী হয়ে যাচ্ছেন, কেউ নির্মাতা, কেউ নাটক লেখক। চেহারা সুন্দর তো নায়ক বা নায়িকা হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে ভালো স্ট্যাটাস দিতে পারে, কপিরাইটার বা স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়ে যাচ্ছে। যে অ্যাকশন কাট বলতে পারেন তিনি ডিরেক্টর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রিপারেশন?’ তিনি মনে করেন, বর্তমান নাটকে সঙ্গে জড়িত অনেকেই প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যে কারণে নাট্য অঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করছে।


এই প্রসঙ্গে নিজের একটা অভিজ্ঞতা শোনালেন জীবন। তখন তিনি মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। সেই সময় তাদের ইউনিটে ছিলেন গুণী অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী। একটা দৃশ্যের জন্য হুমায়ূন ফরিদীকে ডাকতে গিয়েছিলেন জীবন। গিয়ে দেখেন এই অভিনেতা কিছু অতিথিসহ মেকআপ রুমে বসে আছেন। এমন সময় একজন হুমায়ূন ফরিদীকে বললেন, ‘আমার ভাগনে যেমন লম্বা, তেমন ফরসা। এমন সুন্দর চেহারা আপনাদের জগতে একজনও নাই। ওকে কি এই লাইনে নেওয়া যায়?’

হুমায়ূন ফরিদী তাকে প্রশ্ন করলেন, তার প্রস্তুতি কি?
লোকটি বললেন, প্রিপারেশন আর কি! আপনারা আছেন না।
ফরীদি তার কাছে জানতে চাইলেন, ডাক্তার হওয়ার জন্য কত দিন লাগে?
অতিথি উত্তর দিলেন।
ইঞ্জিনিয়ার হতে কত দিন লাগে?
অতিথি উত্তর দিলেন।
একজন হুমায়ূন ফরীদি হইতে কত দিন লাগে?
অতিথি চুপ।

জীবন বলেন, ‘আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, তাদের মধ্যে অন্য সব সেক্টরের মতোই অস্থিরতা বেশি। কাজটাকে অনেকেই একটা শর্ট কাট ব্যাপার মনে করছি। অনেকের ভাবনা খুব সহজে পেয়ে যাচ্ছি, পেতে হবে। লাইক, ভিউয়ে বা একজনের গাড়ি, ফ্ল্যাট আছে তাকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। এসব কারণেই দর্শকদের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট কিছুটা হলেও কমছে। অনেক সময় ভালোর পাশাপাশি ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কারও চোখে পড়ছে না। আমাদের তরুণ নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী অনেকেই সম্ভাবনাময় কিন্তু শুরুতেই সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। আমাদের সবার উচিত অস্থিরতা বর্জন প্রস্তুতি নিয়ে চুপচাপ, বুঝে, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করা।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ